কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

জিলহজ মাসের মর্যাদাপূর্ণ কিছু বিশেষ আমল

 

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোরবানির আত্মত্যাগের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। আগামী ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। কেবল সে দিনটিই নয়, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন পালনীয় মর্যাদাপূর্ণ কিছু বিশেষ আমল রয়েছে।

জিলহজ হিজরি বছরের শেষ মাস। এটিকে বলা হয় আত্মত্যাগের মাস। হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানির আদেশ পালনের মাধ্যমে আত্মত্যাগের অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। আল্লাহর প্রতি নবী (আ.)-এর আনুগত্যের পর আল্লাহ ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে পশু কোরবানির আদেশ দেন। তখন থেকেই কোরবানির এই নজরানা শুরু হয়।

 

জিলহজ মাসে পালনীয় বিশেষ আমল :
১. কোনো ওজর আপত্তি না দেখিয়ে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিদের হজ আদায় করা।

২. যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের কোরবানি আদায় করা। আর যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম আত্মত্যাগের নিদর্শন কোরবানি আদায় করা। কারণ সম্পদহীন ব্যক্তি কোরবানির আগ্রহ প্রদানে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে স্বচ্ছলতা দান করতে পারেন।

৩. জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি সম্পাদনের আগে পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা। হাদিস এসেছে-

হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)

৪. জিলহজ মাসের পাঁচ দিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করা আদায় করা। তাকবিরে তাশরিক হলো-

اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَ اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر وَ للهِ الْحَمْد

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

অর্থ : ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’

আর তা শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে। আর শেষ হবে ১৩ জিলহজ আসার নামাজে। যা এ পাঁচ দিন ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর পড়া ওয়াজিব। চাই নামাজ একাকী আদায় করা হোক বা জামাতে।

তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর নারীরা স্বশব্দে পড়বে। অর্থাৎ নারীদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে।

 

৫. শুধু ঈদের দিন (১০ জিলহজ) ছাড়া জিলহজের প্রথম দশকে (৯দিন) রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ঈদের দিন ছাড়া) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করতেন।

৬. এ মাসের নবম দিন ও রাত আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি হলো আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। আর রাতটি হলো মুজদালিফায় (শবে কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ) অবস্থানের রাত।

বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে নবিজী সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এ দিনের রোজা পালনকারীর বিগত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।

এ ছাড়াও এ দশকে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করা, আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা, যথাসম্ভব সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং বেশি বেশি সাদকাহ করা।

 

মর্যাদাপূর্ণ এই মাসের আমলের তাগিদ দিয়েছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। নবিজী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এ দিনগুলোর আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল বেশি প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? উত্তরে নবিজী বললেন, ‘না’, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হন এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসেন। (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা সুরা ফজরের শুরুতেই জিলহজের প্রথম দশ রাতের কসম খেয়েছেনে। তিনি বলেন, ‘কসম ফজরের এবং দশ রাতের।’ এ দশ রাত দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম দশকই প্রমাণিত। জিলহজ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোর মর্যাদা এত বেশি যে, ৯ জিলহজকে হজে অংশগ্রহণকারী সব মানুষকে নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করে নেওয়ার দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার ৯ জিলহজ দিবাগত রাতকে (মুজদালিফার রাত) শবে কদরের চেয়েও মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে মনে করা হয়। এ রাতের ইবাদত বন্দেগিতে আল্লাহ তাআলা জুলুমকারীকেও ক্ষমা করে দেন।

 

মুসনাদে আহমদে এসেছে, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশকের শেষ দুদিন অর্থাৎ ‘ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর (কোরবানির দিন) হওয়ায় তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ জিলহজ মাসের মর্যাদা বেশি হওয়ার আরো দুটি কারণ হলো- এ মাসেই হজ ও কোরবানি আদায় করতে হয়। যা মর্যাদাপূর্ণ মাস রমজানেও আদায় করা সম্ভব নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসব্যাপী নামাজ, রোজা (ঈদের দিন ছাড়া), দান-অনুদান, হজ, কোরবানি, জিকির আজকার, কোরআন তেলাওয়াতসহ কল্যাণকর কাজে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: